আপডেট নিউজ ডটকম:
সঙ্গীতের সাথে বন্ধন গড়ে ওঠে সে-ই ছোটবেলা থেকেও। বাবা আব্দুল মালেক জমাদারের কাছেই প্রথম সঙ্গীতে উৎসাহ লাভ করেন। এরপর শাহনাজ তাঁর খালা হাজেরা বিবি ছিলেন পালাগানের লোকপ্রিয় শিল্পী। তাঁর হাতেই গানের হাতে খড়ি। স্কুল জীবনে সঙ্গীতে তালিম নেন ফরিদপুর জেলার ওস্তাদ কার্ত্তিক মজুমদারের কাছে। গানের সাথে ওঁর হৃদয়ের বন্ধনটা এতোটাই গভীর হয়ে যায় যে নিজের সঙ্গীত পিপাশাকে আরো সমৃদ্ধ করতে জন্মস্থান ফরিদপুর থেকে চলে আসেন রাজধানী ঢাকা। সংগীতাঙ্গনের অনেকের কাছেই ধর্নাও দেন তিনি। তারপর খ্যাতিমান কন্ঠশিল্পী এবং সঙ্গীত পরিচালক মুজিব পরদেশী’র কাছেও গান শেখেন কিছুদিন। এরপর একে-একে তালিম নেন ওস্তাদ জীবন খান ও ওস্তাদ পুলক চৌধুরীর কাছে। এরই মাঝে তিনি সুযোগ পেয়ে যান মুজিব পরদেশীর সংগীতায়জনে একক এ্যালবামে গান গাওয়ার। বের হয় তাঁর প্রথম এলবাম -“তোমার অন্তরে বিষ”। এযাবত তাঁর এলবাম বেরিয়েছে ১২টি। গান গেয়েছেন দু-শ’র বেশী। এলবামের পাশাপাশি ১৯৯৮ সাল থেকে আজ অবধি মঞ্চে গান করছেন। শো করতে বিদেশেও যাচ্ছেন। এরই মাঝে গেছেন মালয়েশিয়া, আরব আমিরাতের দুবাই, কাতার, লেবানন, মালদ্বীপ, ভারতের আসাম এবং কোলকাতাসহ আরো অনেক জায়গাতেই।
বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে শাহনাজ বাবু প্রায় নিয়মিতভাবেই স্টেজ প্রোগ্রামে গান গাইছেন – ইউটিউব চ্যানেলগুলোয় প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর নতুন-নতুন এলবাম। ইউটিউবে প্রকাশিত কিছু গান ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।
ইম্প্রেস টেলিফিল্মস-এর “আজকের রূপবান” সিনেমার সবগুলো গানসহ বেশ কিছু সিনেমার গানেও কন্ঠ দিয়েছেন শাহনাজ বাবু।
প্রথিতযষা সুর ও সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ এর সুর ও সংগীত আয়োজন এবং গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুদ্বীপ কুমার দ্বীপ, ফরিদা ফারহানা’র কথায় ১০টি গানের একক এ্যালবামের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও শাহ্ সুফী সজীব চৌধুরীর কথা ও সুরে দু’টি দরবারী গানের একক ভিডিও এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।
সজীব চৌধুরীর কথা ও সুরে ক্লোজআপ ওয়ান খ্যাত রিংকুর সাথে “প্রেম পুঁজা” নামে একটি ডুয়েট এ্যালবামও শিগগিরি বাজারে আসছে।
শাহনাজ বাবু বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের একজন নিয়মিত কন্ঠশিল্পী। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন ছাড়াও তিনি বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানালেও গান করে আসছেন নিয়মিতভাবেই।
গানের ক্ষেত্রে শাহনাজ বাবু’র ভালোলাগে আকড় মাটির সবাদ-গন্ধ মেশানো ফোক সঙ্গীত। অনেকটা মমতা আর ভালোবাসায় জড়িয়ে গেছে তিনি লোক সঙ্গীতের সাথে। তিনি বলেন, “ফোক গান হলো মাটি ও মানুষের গান। আমি ফোক গানকে মনেপ্রানে ভালোবাসি। লোক সঙ্গীতই আমার জীবন – আমার হৃদয়ের স্পন্দন”।
বর্তমানে বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির দুর্দিন প্রসঙ্গে শাহনাজ বাবু বলেন, “সব ইন্ডাস্ট্রিতেই উত্থান-পতন থাকে। বিশেষ করে নতুন-নতুন প্রযুক্তি আসার কারণে। কিন্তু কোনোকিছুই স্থায়ী নয়। আমি মনেপ্রানে বিশ্বাস করি, বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি আবারও জেগে উঠেবেই। কারণ, গান ছাড়া বাঙ্গালি বাঁচেনা – বাঁচতে পারেনা”।
ওপার বাংলার সঙ্গীতাঙ্গন সম্পর্কে তিনি বলেন, “গানের তো সীমান্ত হয়না – থাকতেও নেই। আমার কাছে ‘বাংলা’ শুধুই বাংলা। সেখানে এপাড়-ওপাড় বলে তো কোনো কিছুই নেই। বাঙ্গালী গানকে শুধু ভালোই বাসেনা, প্রত্যেকটা বাঙ্গালীর রক্তে-স্বত্বায় মিশে আছে সঙ্গীত। আসাম কিংবা কোলকাতায় গান করতে যেয়ে আমার একবারের জন্যেও মনে হয়নি আমি অন্যকোনও দেশে গেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে ঠিক যেনো আমার মায়ের কোলেই আছি। এতো ভালোবাসা ওঁরা আমায় দিয়েছেন, যার ঋণ শোধ করার যোগ্যতা আমার নেই। আমি গানের সুরে-সুরে এই বিশাল বাংলায় ছড়িয়ে যাবো ভালোবাসা। যে ভালোবাসার মোড়কেই আমাদের বাঙ্গালী স্বত্বা”।
সম্প্রতি ভারতের সাসকো এন্টারটেইনমেন্ট বাংলা সঙ্গীতকে বিশ্বময় তুলে ধরার যে উদ্যোগ নিয়েছে এ প্রসঙ্গে শাহনাজ বাবু বলেন, “ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা। সত্যিই ওঁরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলা সঙ্গীতকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার এর ফলে আমাদের সঙ্গীতকে বিশ্ববাসী জানবে, বাংলা সঙ্গীতের শিল্পীদের জন্যে কাজের আরো বড় ক্ষেত্র তৈরী হবে, এমনটাই আমার প্রত্যাশা। কিন্তু ওনাদের কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ, বাংলার লোকসঙ্গীতকে যেনো ওঁরা বিশেষ প্রাধান্য দেন। কারণ আমি মনে করি, সত্যিকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলা লোকসঙ্গীত যেভাবে বিশ্বময় ছড়ানো উচিৎ ছিলো তেমনটা হয়নি এখনো। একটা উদাহরন দিচ্ছি। সাইজি লালন ফকিরের প্রতিটি গানের মাঝে যে গভীরতা আর আধ্যাতিকতার বিষয়গুলো আছে সেগুলো কেবল যে মানুষের হৃদয়কে নাড়া দেয় শুধু তা-ই তো নয়, লালনের গান আমাদের ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলিয়ে মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। এমন এক পৃথিবীর কথা বলে যেখানে শুধুই আছে মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসী – আছে স্রষ্টা-সৃষ্টির মাঝে বিনিসুতোর বন্ধনের এক গভীর দর্শন। আবার সময়ের গীতিকবি শাহ্ আব্দুল করিমের গানে আছে প্রেম নামের বিষয়টা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার সব আয়োজন”।
তিনি আরো বলেন, “পবন দাস বাউলের কন্ঠে যখন শুনি ‘দিন দুনিয়ার মালিক খোদা দিলেকি দয়া হয়না’ তখন আমার হৃদয়টা কেঁপে ওঠে স্রষ্টার প্রতি একজন সৃষ্টির আর্তনাদে। আবার রাধারমণ যখন বলেন, ‘বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়া যাবি’ তখন আমার দু-চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সত্যিই তো, জীবনে আমরা ওই ‘পরের’ জন্যে তো কম করিনি। কিন্তু বিনিময়ে ওরা কী করেছে আমাদের জন্যে? আমার আবেগপ্রবন হৃদয়টা তখন উদাস হয়ে যায়। আমি তখন রাতের আকাশের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে স্রষ্টাকেই প্রশ্ন করি – দয়াল কি সুখ তুমি পাও, সুখের ঘরে আগুন দাও, যেজন তোমার দয়ার কাঙ্গাল তারে কাঁদাও”।
সবশেষে শাহনাজ বাবু’র কাছে জানতে চাইলাম ‘জমজমাট’ সম্পর্কে ওনার অনুভূতি। তিনি তাঁর ওই চিরচেনা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, “পত্রিকাটা নতুন হলেও এর সাথে যারা আছেন ওঁদের অধিকাংশই সঙ্গীতপ্রেমী, এবং কি সঙ্গীতজ্ঞ। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। আমি হৃদয়ের গভীর থেকে দোয়া করছি, ‘জমজমাট’ ছড়িয়ে পড়ুক বিশাল বাংলায় – ঢাকা থেকে কোলকাতা কিংবা ফরিদপুর থেকে নদীয়া অবধি। এ পত্রিকাই হয়ে উঠুক বাংলা ভাষাভাষী সবার মনের কাগজ – বাঙ্গালীর মুখপত্র”।
আপডেট নিউজ ডটকম / রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৮ মাঘ ১৪২৫